মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অসংখ্য লোকের মনে এখন একটা প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে। আর সেই প্রশ্নটা হচ্ছে- সৌদি-ইসরায়েল শান্তিচুক্তি কি আসন্ন? কেননা, সৌদি শাসকরা ঐতিহাসিকভাবেই ইসরায়েলের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন; কিন্তু সেই তারাই কি শেষ পর্যন্ত ওই দেশটিকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে?
এক সময় এই আরব মিডিয়ায় ইসরায়েলকে আখ্যায়িত করা হতো ইহুদিবাদী শক্তি হিসেবে। অথচ এখন তারা দৃশ্যত ঘনিষ্ঠ মিত্রতার পথে হাঁটছে। সামাজিকমাধ্যমে সম্প্রতি এ নিয়ে প্রবল জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। সৌদি মালিকানাধীন আল-আরাবিয়া টেলিভিশনে সম্প্রতি প্রচারিত এক সাক্ষাৎকার থেকে এ জল্পনা আরও জোরাল হয়।
আল-আরাবিয়া টিভিতে প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন সাবেক সৌদি গোয়েন্দাপ্রধান প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান আল-সউদ। ওয়াশিংটনে দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করায় ফিলিস্তিনি নেতারা যেভাবে কয়েকটি আরব দেশের সমালোচনা করেছেন, তার তীব্র প্রতিবাদ জানান প্রিন্স বান্দার। তার ওই সাক্ষাৎকারটি তিন পর্বে প্রচার করা হয়। প্রিন্স বান্দার বলেন, ‘যে কর্মকর্তারা তাদের লক্ষ্যের প্রতি সারাবিশ্বের সমর্থন পেতে চান, তাদের কাছ থেকে এত নিম্ন স্তরের এই বিতর্ক আমরা আশা করি না।’ তিনি বলেন, ‘উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি নেতাদের এই বাড়াবাড়ি এবং নিন্দনীয় কথাবার্তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তখন ফিলিস্তিনি নেতারা একে ‘বেইমানি’ এবং ‘পিঠে ছুরি মারা’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। প্রিন্স বান্দার ওয়াশিংটনে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এক টানা ২২ বছর। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের এতই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে, অনেকে তাকে ডাকতেন ‘বান্দার বিন বুশ’ নামে।
আল-আরাবিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রিন্স বান্দার ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের ‘ঐতিহাসিক ব্যর্থতা’র কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তারা ধরেই নিয়েছিল যে, সৌদি আরব সব সময়ই আমাদের সমর্থন দিয়ে যাবে।
সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের দাবি অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত; কিন্তু তারা যে এত বছরেও একটা শান্তিচুক্তি করতে পারলো না, তার জন্য ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব উভয়কেই সমানভাবে দায় নিতে হবে। ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব এখন বিভক্ত। পশ্চিম তীরে শাসনকাজ চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে গাজার ক্ষমতা দখল করে আছে ইসলামপন্থি আন্দোলনকারী হামাস। প্রিন্স বান্দার সেদিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের নেতারা যখন নিজেদের মধ্যেই একমত হতে পারছেন না, তখন তারা একটা চুক্তিতে পৌঁছাবে কীভাবে?
সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলছিলেন, সৌদি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেলে এ ধরনের বক্তব্য কখনোই প্রচার হতে পারে না, যদি বাদশাহ সালমান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আগে থেকে এটা অনুমোদন না করেন। এই কথাগুলো বলবার জন্য তারা বেছে নিয়েছেন প্রিন্স বান্দারকে, যিনি একজন প্রবীণ কূটনীতিক এবং সৌদি রাজপরিবারের স্বার্থসিদ্ধির এক বিশ্বস্ত স্তম্ভ।
তার মতে, এখন পর্যন্ত এটা হচ্ছে সবচেয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে এক সময় একটা চুক্তি করবে। তার জন্য তারা দেশের মানুষকে প্রস্তুত করছে।
Leave a Reply